Sunday, September 10, 2017

কেউ কথা রাখেনি

কেউ কথা রাখেনি

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনিছেলেবেলায় বোষ্টুমি তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল.            শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু  শুনিয়ে যাবেতারপর কত চন্দ্রভুক অমাবস্যা এসে চলে গেল কিন্তু সেই বোষ্টুমি.                                                                আর এলো না.             পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি |মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলি বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর.             তোমাকে আমি তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো.             সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর.                                                                 খেলা করে !নাদের আলি, আমি আর কত বড় হবো  ? আমার মাথা এই ঘরের ছাদ.            ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়.                                    তিনপ্রহরের বিল দেখাবে ?একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনোলাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা ভিখারির মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি.                                    ভিতরে রাস-উৎসব অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ-পরা ফর্সা রমণীরা.            কত রকম আমোদে হেসেছে.            আমার দিকে ফিরেও চায়নি !বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন আমরাও----বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুইসেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উত্সব.             আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবে না !বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে.             সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে !ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছিদুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীলপদ্ম তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ.            এখনো সে যে-কোনো নারী  !কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশবছর কাটলো, কেউ কথা রাখে না !.  

No comments:

Post a Comment

একটি " জগন্নাথপুর শিক্ষা ফাউন্ডেশন"

জগন্নাথপুর শিক্ষা ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক সেবা প্রতিষ্টান। উক্ত গ্রামের হতদরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের বিনা খরচে শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও আর্...